প্রাকৃতিক রূপে অনন্য, কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই

Share on Facebook

বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর লেক কাপ্তাই, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদুপানির হ্রদ। প্রধানত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এর সৃষ্টি হলেও, এই জলাধারে প্রচুর পরিমাণের মিঠাপানির  মাছও চাষ করা হয়। রাঙামাটি শহরে থাকা এই হ্রদের সাথে পাহাড়ের অকৃত্রিম সহাবস্থান এককথায় অতুলনীয় যার দেখা দেশের আর কোথাও মেলেনা। এ যেন অথৈ জল, পাহাড়ি সবুজ আর আকাশের মিলনে পরিপূর্ণ বৈচিত্র্যের এক সমাহার।

নির্মল সবুজে ঘেরা পাহাড়ি প্রকৃতি-

কাপ্তাই লেকের সঙ্গে কর্ণফুলী, কাচালং ও মাইনী নদীর নিবিড় সংযোগ রয়েছে। কাচালং নদীর উজানে লংগদুর মাইনীমুখে এসে হ্রদের বিস্তার দেখে হতবাক হতে হয় এর দর্শককে। ১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হলে এই লেক সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বাঁধ নির্মাণ করা হলে পানি সংরক্ষণের জন্য পাহাড়ের মধ্যকার সমতল ভূমি ও উপত্যকা ভরাট করার মাধ্যমে জন্ম হয় সৌন্দর্য্যের আধার এই হ্রদটি।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাই লেক-

কৃত্রিম নীল স্বচ্ছ জলে
পরিপূর্ণ লেকটির মোট আয়তন ১৭২২ বর্গ কিলোমিটার। ইংরেজী ‘এইচ’ অক্ষরের আকৃতির এই হ্রদের
বিশাল জলাধার দুইটি সরু ও সুগভীর চ্যানেল শুভলংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। ফুরোমন
পাহাড় চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি।
ছোট ছোট ডিঙি নৌকা ছুটে চলছে জলের বুকে,
জলরাশির মধ্যভাগে জেগে আছে ছোট ছোট সবুজ দ্বীপ। এখানে চোখে পড়ে
ছোট-বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝরনা আর জলের সাথে সবুজের
মিতালী। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জল কেন্দ্রিক
জীবনযাত্রা দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মূহুর্ত। কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার
সমস্ত রূপ উজার করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে।

প্রকৃতি এখানে কতটা অকৃপন হাতে তার রূপ-সুধা ঢেলে দিয়েছে তা দূর থেকে কখনই অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

৭২৫ বর্গকিলোমিটারের
কাপ্তাই ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের নানা প্রান্তে। কাপ্তাই লেকের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো
শুভলং ঝরনা। বর্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এই ঝরনা। চারদিকে সুবিশাল সবুজ পাহাড়ের মাঝে
এই ঝরনার পানি পড়ার দৃশ্য অপরূপ। শুভলংয়ের আশেপাশের পাহাড়গুলো খুবই উঁচু, খাড়া ও নয়নাভিরাম। কাপ্তাইয়ের
স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে শুভলংয়ের দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক
দৃশ্য।

স্থানীয় মানুষের জল কেন্দ্রিক জীবন-

কাপ্তাই লেককে ঘিরেই মূলত গড়ে উঠেছে রাঙামাটি জেলার পর্যটন শিল্প। এই লেকের উপরে রয়েছে বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ। ট্রলার ভাড়া করে লেকে ভ্রমণও করা যায়। ট্রলারে করে যাওয়া যায় শুভলং জলপ্রপাতেও। লেকের পাড়ে রয়েছে নতুন চাকমা রাজবাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দির।  বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম রাজবন বিহারটি রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত, যা পূণার্থী এবং দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম একটি আর্কষনীয় স্থান। এছাড়াও কর্ণফুলি নদী, নেভি একাডেমী, শেখ রাসেল ইকোপার্ক, ক্যাবল কার ইত্যাদি রয়েছে ঘুরবার মতো।

কাচালং নদীর উজানে লংগদুর মাইনীমুখে এসে হ্রদের বিস্তার সর্বোচ্চ। দূর হতে আকাশ, পাহাড় ও হ্রদ মিশে যায় যেখানে-

কিভাবে যাবেন-
ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর থেকে বিভিন্ন মানের বাসে করে ৭-৮ ঘন্টার মাঝেই সরাসরি কাপ্তাই যাওয়া যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও কাপ্তাই যাওয়া যায়। বদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন-
কাপ্তাইয়ে রাত্রি যাপনের জন্য এখনো তেমন ভালো মানের বাণিজ্যিক হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠেনি। গোল্ডেন হিল, গ্রিন ক্যাসল, লেক ভিউ, সুফিয়া ইত্যাদি হোটেলে ব্যবস্থা রয়েছে রাত্রিযাপনের। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি রেস্ট হাউজ, সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউজগুলোতে কম খরচে রাত্রি যাপন করা যায়।

Leave a Reply