তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পর্যটন শিল্প

Share on Facebook

মানুষ আধুনিক সভ্যতা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে তিনটি বড় বিপ্লবের মাধ্যমে। প্রথম বিপ্লবটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন (১৭৮৪) আবিষ্কার, দ্বিতীয় বিপ্লবটি বিদ্যুৎ (১৮৭০) আবিষ্কার ও তৃতীয় বিপ্লবটি হচ্ছে ইন্টারনেট (১৯৬৯) আবিষ্কার। এই তিনটি বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষ সভ্যতা আজকের মতো আধুনিক সভ্যতায় পরিনত করতে পেয়েছে। আমরা নতুন আরেকটি বড় বিপ্লবের যুগে পা রাখতে চলেছি। সেটা হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তির বিপ্লব বা ডিজিটাল বিপ্লব।ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে পৃথিবী পাবে নতুন রূপ ও যোগ হবে নতুন মাত্রা। আগামী দিনের বিশ্ব যুদ্ধ করবে তথ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে।

প্রথমেই ডিজিটাল বা তথ্য ও প্রযুক্তির বিপ্লবের রূপরেখা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও সকল ক্ষেত্রেই তথ্য ও প্রযুক্তির টেকসই উন্নয়ন হবে ডিজিটাল বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য। যেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বিপ্লবের কাজকে গতিশীল করা যাবে সেগুলো হচ্ছে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ই- লানিং, রোবোটিকস ও অটোমেশন, থ্রি ডি প্রিন্টিং, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, জিন প্রযুক্তি, কম্পিউটার ক্লাউডিং, ই-বিজনেস এবং ই-ট্যুরিজম ইত্যাদি। প্রযুক্তি বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে নতুন নতুন কাজের সৃষ্টি, কারিগরি পেশার চাহিদা বৃদ্ধি, শিল্প ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা, অটোমেশনের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস,উৎপাদন শিল্পে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বড় পরিবর্তন, বিশেষায়িত পেশার চাহিদা বৃদ্ধি,
সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, এবং ২০২৫ সাল নাগাদ ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার সংযোগের সম্ভাবনা(সূত্র-ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফোর্বস, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি)।

পর্যটন শিল্পেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। উউড়োজাহাজের আবিষ্কার বিশ্ব পর্যটনকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল। ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার এখন আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ১২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দিন দিন ই-ট্যুরিজমের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্যুরিজমের সাথে জড়িত খাতগুলো যেমন- এয়ারলাইনস, এয়ারপোর্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, থিম পারক,রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, জিডিএস কোম্পানিগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। ট্যুরিজমের বিভিন্ন বিষয়ে ই-ট্রেনিং পরিচালিত করছে IATA , ATTI, NHTTI সহ অনেক প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনিস্টিউট।

এয়ারলাইনসগুলো তাদের বুকিং, ইসু,রি-ইসু,রিফান্ড এর মত বিষয়গুলো CRS and GDS (Galileo, Amadeus, Sabre) মাধ্যমে পরিচালনা করছে। মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহার করছে ই-প্লাটফর্ম। হোটেল পরিচালনা ও রিজার্ভেশনের জন্য ব্যবহার করছে Property Management System ও Online Reservation System.ট্যুরিজমের বিভিন্ন সেবা ও রিজার্ভেশনের জন্য আরো ব্যবহার করছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি, Airbnb, Expedia, Sharetrip,Tripadvisor ইত্যাদি। পর্যটন বিষয়ক সেবা ও তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন অনলাইন ভিক্তিক মাধ্যম যেমন – ওয়েবসাইট, নিউজ পোটাল, অনলাইন ট্রাভেল গ্রুপ,অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর থেকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই পর্যটকরা প্রযুক্তি মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে তাদের ট্যুর বুকিং থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পন্ন করে থাকেন।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে ডিজিটালাইজেশনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। a2i প্রকল্পের আওতায় পর্যটন শিল্পকে প্রযুক্তিবান্ধব ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশের ট্রাডিশনাল ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরের পাশাপাশি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ট্যুরিজম ব্যান্ডিং, ডেস্টিনেশন ব্যান্ডিং, পণ্য ও সেবার বিপণন, ট্যুরিজম ইনফরমেশন প্রচার ও প্রসার সহজতর হয়েছে।ইতিমধ্যেই দেশের মধ্যে অনলাইন ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্সি গুলো বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গ্রাহকেরা ঘরে বসে এয়ার টিকিট, ট্যুর বুকিং, হোটেল বুকিং, ফুড অডারের মত সেবাগুলো পেয়ে যাচ্ছেন। একদিকে তাদের সময় বেচে যাচ্ছে অন্য দিকে ট্রাভেল এজেন্সি গুলোতে যেতে হচ্ছেনা।

আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে।নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এই শিল্পে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে। দেশে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির করে পর্যটন শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে এর সুফল পাওয়া সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য পর্যটন শিল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী
প্রভাষক, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান – বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন

Leave a Reply