জ্যোৎস্না ছড়ানো চাঁদের গল্পে ফাহাদ

Share on Facebook

পর্যটন বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টালপর্যটনিয়াপর্যটন শিল্পের নানা সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরে আসছে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যটন বিষয়ে অধ্যয়নরত অনেক ছাত্রছাত্রী যথাযথ তথ্যের অভাবে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত সুতরাং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পর্যটনের সাবেক ছাত্রছাত্রীদেরক্যারিয়ার স্টোরিপ্রকাশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পর্যটনিয়া পর্যটন বিষয়ে পড়ালেখা করে তাঁদের আজকের অবস্থান একজন ছাত্রকে হয়তো তার নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়তে স্বপ্ন দেখাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহসী করে তুলবে পর্যটনের সাবেক ছাত্রদেরক্যারিয়ার স্টোরিহোক শঙ্কিত ছাত্রদের দিকনির্দেশনা আর সাহসী ছাত্রদের প্রেরণা
আমাদের এই পর্বের আয়োজন জনাব মোঃ ফাহাদ নূরকে নিয়ে। তিনি বর্তমানে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত আছেন।

পড়ালেখা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেবাবা-মায়ের মুখে এই বুলি শুনে বড় হয়নি এমন ছেলেমেয়ে হয়তো পাওয়াই দুষ্কর। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েদের আবার শুধু পড়ালেখা করলেই হবে না তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হলেও কমপক্ষে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করা ফাহাদকে ঘিরেও তার সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনদের একটা প্রত্যাশা ছিল তিনি আর কিছু না হলেও বিসিএস ক্যাডার অথবা ব্যাংকার হবেন।

বন্ধুদের সাথে ফাহাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত জীবন ফাহাদকে তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রত্যাশার বাইরে নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখতে সাহস যুগিয়েছিল। কমনরুমে ট্র্যাভেল এন্ড লিভিং চ্যানেল দেখতে দেখতে বিশ্ব ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন গেঁথে যায় ফাহাদের মনে। স্বপ্ন পূরণের তাগিদে তিনি গ্রাজুয়েশন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এমবিএ তে ভর্তি হন। লক্ষ্য স্থির করেন ট্যুর অপারেটর হয়ে বিশ্ব ঘুরে বেড়াবেন অথবা মালদ্বীপ, মরিশাস কিংবা অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশে গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে ফাইভ স্টার কোনো রিসোর্টে চাকরি নিয়ে বিলাসী জীবন গড়বেন। কিন্তু ছোটো থেকেই মেধাবী আর ভালো ছেলে হিসেবে সুনাম অর্জনকারী মোঃ ফাহাদ নূর ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত পরিবার কিংবা নিকটজনদের প্রত্যাশার বৃত্তের বাইরে পা রাখতে পারলেন না।

ফাহাদ যখন ট্যুরিজম এন্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ পড়েন তখনকার প্রেক্ষাপট আজকের মতো এতো সহজ ছিল না। স্বাভাবিকভাবে অনেকেই মনে করতেন হোটেলের চাকরি করতে আবার এমবিএ পড়া লাগে নাকি! একটা শর্ট কোর্স কিংবা ডিপ্লোমাই তো যথেষ্ট। হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি যে শুধুমাত্র হোটেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় কিংবা একটা ফাইভ স্টার হোটেলের চাকরি যে যেনোতেনো কোনো বিষয় নয়টা বলে বোঝানো যেতো না। তারা অভিমান করে বলতেন, হোটেলেই যদি চাকরি করবে তাহলে ছোট থেকে এতো কষ্ট করে এতো পড়ালেখা করার কী দরকার ছিল!

স্ত্রী ও সন্তানের সাথে ফাহাদ

ভুল সময়ে বেড়ে ওঠা এরকম অনেক ফাহাদদের স্বপ্ন বিসর্জনের মাধ্যমেই ট্যুরিজমে পড়াশোনা করে আজকে হোটেল বা এয়ারলাইন্সের বাইরে গিয়েও ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব হচ্ছে। সেদিনের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ফাহাদ নূর আজ ব্যাংকার। এরকম আরও অনেকেই আছেন যারা হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির বাইরেও বিসিএস ক্যাডার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তারা সবাই স্ব স্ব পেশায় কাজে-কর্মে দক্ষতার পাশাপাশি হসপিটালিটিরও স্বাক্ষর রাখছেন। ফলে নিয়োগ দানকারী কর্তৃপক্ষও বুঝতে পারছেন, ট্যুরিজম নিয়ে পড়ালেখা করেও তারা অন্য সেক্টরেও সফল হতে পারে। তারা প্রমাণ করছেন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট মানে সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট। যে চাকরিই করুক না কেন, দিনশেষে মূল কাজ কিন্তু সেবা দেওয়াই। তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট মানে যে আথিতেয়তা এবং এর ব্যবস্থাপনা যা প্রতিটি সার্ভিস ওরিয়েন্টেড প্রফেশনের মূল উপজীব্য তা এখন অনেকে বিশেষকরে চাকরিদাতারা বুঝতে পারছেন। ব্যাংক, টেলিকম, এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, পাবলিক রিলেশনশিপ, ট্রাভেল এন্ড ট্যুর অপারেশন সহ যাবতীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের রেভিনিউ অর্জিত হয় সেবা বিক্রি করে কোনটা আর্থিক সেবা, কোনটা যোগাযোগ কিংবা চিত্ত বিনোদন।

একদা সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে বিভোর ফাহাদ নিজেকে সেবা শিল্প উপযোগী করে তৈরী করছিলেন ভালোভাবেই। তারই অংশ হিসেবে এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি থেকে অনার্স শেষ করে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এমবিএতে ভর্তি হওয়া। এমবিএ পড়াকালীন সময়েই দেশের অন্যতম শীর্ষ টেলিকম সংস্থা গ্রামীনফোনে আউটবাউন্ড সেলস বিভাগের এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি নেওয়া। যেখানে তিনি গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন গ্রাহককে গ্রামীনফোনের সেবার আওতায় আনতে কাজ করেছেন এমবিএ পড়তে গিয়ে তিনি শিখেছেন, কাস্টমার ইজ দ্যা বস। গ্রাহকের ইচ্ছাই শেষ কথা। সুতরাং আমার মতো করে নয় বরং গ্রাহক যেভাবে সেবা পেতে চায় সেভাবেই তা প্রদান করতে হবে। একই সেবা একেক গ্রাহক একেকভাবে নিতে পছন্দ করে। কোন গ্রাহক কিভাবে চায় তা বুঝে সেই অনুযায়ী সার্ভিস দেয়াটাই হলো হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের তাত্বিক জ্ঞান সমৃদ্ধ ফাহাদ নিজেকে তৈরীর অনুশীনল হিসেবে প্রথম চাকরিতেই অত্যন্ত সফল হলেন।

বাবা-মাকে সাথে নিয়ে ফাহাদ

হসপিটালিটি বিষয়ে তাত্বিক ও বাস্তবিক জ্ঞনার্জনকারী মোঃ ফাহাদ নূর শেষ পর্যন্ত সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রত্যাশার বাইরে যেতে পারেন নাই। এমবিএ শেষ করে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী অফিসার (এমটিও) পদে যোগদান করেন। কিছুদিন পর সেখানে থেকে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে চলে আসেন এবং বর্তমানে এখানেই তিনি উপ-ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত আছেন। তিনি হয়তো সমুদ্রের পাড়ের প্রত্যাশিত রিসোর্টে চাকরি নিতে পারেন নাই তবুও তো তিনি ব্যাংকার। ব্যাংকতো একটা সেবা নির্ভর প্রতিষ্ঠান। এখানে তিনি গ্রাহকদেরকে আর্থিক সেবা দিচ্ছেন। তিনি জানেন বাংলাদেশের মতো একটা ছোট দেশে এতোগুলো ব্যাংক, গ্রাহক যদি প্রত্যাশিত সেবা না পায় তাহলে অন্য ব্যাংকে চলে যাবে। ব্যাংকিং আইন ও নীতি-নৈতিকতার মধ্য থেকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে তিনি গ্রাহকদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। সাম্প্রতিক করোনাকালীন সময়ে গ্রাহকদের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে, নিত্য নতুন ফরম্যাটে আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছেন। তিনি মনে করেন, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানজমেন্ট নিয়ে পড়ালেখা করার কারণেই হয়তো দক্ষতার সাথে সেবামূলক মানষিকতা প্রদর্শন করতে পারছেন।

বর্তমানে ফাহাদ নূর একজন পুরোদস্তুর ব্যাংকার ও পর্যটক। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করেন। তার সহধর্মিণীও একজন ব্যাংকার হওয়ায় পরিবার নিয়ে সব সময় বের হতে না পারলেও কখনো পরিবার নিয়ে কখনো বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পরেন। অনেক সময় সহকর্মীদেরও ট্যুর প্ল্যানিং করে দেন। নিয়মিত ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ভ্রমণকে উৎসাহিত করতে তিনি একটি অনলাইন ভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ খুলে নিজের শিক্ষা অভিজ্ঞতার আলোকে পর্যটন সেবা দিতে চান। সফর অনুরাগী ব্যাংকার ফাহাদ নূর পেশাগত জীবনে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যাক পর্যটনিয়া পরিবার সেই কামনা করে। পাশাপাশি আমরা আশা করছি যে, দেশের পর্যটনকে আরও উৎসাহিত করতে তিনি শীঘ্রই তার অনলাইন ভ্রমণ গ্রুপ খুলবেন।

Leave a Reply