করোনাভাইরাস : আপাতত বিদেশভ্রমণে না যেতে পরামর্শ

Share on Facebook

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আপাতত বিদেশভ্রমণে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের বাইরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এ ভ্রমণসতর্কতা দেওয়া হয়েছে। তবে তা নিষেধাজ্ঞা নয়। তারপরও বিদেশে যেতে হলে ভ্রমণকালীন সতর্কতা কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদসম্মেলনে গতকাল রোববার আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা এ সতর্কবার্তা দেন। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে চীনভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে থেকে সারা বিশ্বে ভ্রমণের জন্য এই সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

মীরজাদী সেব্রিনা জানান, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এসব রোগীর অনেকেই কখনো চীনে যাননি বা কোনো চীনা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস জানা যাচ্ছে না। ফলে করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতি বৈশ্বিকভাবে জটিল হচ্ছে।

ভ্রমণকালীন সতর্কতার অংশ হিসেবে সেব্রিনা বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তির কাছাকাছি না যাওয়া, করমর্দন ও কোলাকুলি না করা, জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে হবে। তারপরও ভ্রমণ করার পর কারও মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৭৯৪ ও মারা গেছেন ২ হাজার ৩৪৮। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৯ জন ও মারা গেছে ১০৯ জন। চীনে সংক্রমণের সংখ্যা কমছে। নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০২ জনই চীনের বাইরে। চীন ছাড়াও ২৮টি দেশে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ইসরায়েল ও লেবানন। দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা নতুনভাবে উদ্বেগের তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন মীরজাদী সেব্রিনা। এর অংশ হিসেবে ওই দেশের সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। চীনের পরে এই দেশটিতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সিঙ্গাপুরেও রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, ৮৬ জন।

আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও মধ্যে করোনার সংক্রমণ পায়নি। আবার চীনের উহানফেরত ৩১২ জন যাত্রী কোয়ারেন্টাইন শেষে নবম দিনেও সুস্থ আছেন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশি সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

এই রোগের প্রতিষেধক নেই বলে প্রতিরোধে জীবনাচরণের ওপর জোর দিতে হবে। এর পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে পৃথক ইউনিটের ব্যবস্থা করেছে। মীরজাদী সেব্রিনা জানান, ঢাকার তিনটি হাসপাতালকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হাসপাতালে নতুন করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার জন্য পৃথক চিকিৎসাপদ্ধতি না থাকলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। রোগী এলে কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হবে, পরীক্ষা করে ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে—সেখানে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আইইডিসিআরের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রস্তুতিও বাড়ানো হয়েছে। জনগণকে আতঙ্কিত না হতে ও গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা।

Leave a Reply