ওয়েলকাম টু ফিনল্যান্ড

Share on Facebook

প্লেন জার্নি নিয়ে আমার একটা বিচিত্র অভ্যাস আছে। প্লেন যখন ল্যান্ড করার সময় একটু একটু করে নিচে নামতে থাকে তখন হা করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি। ম্যাপের আঁকিবুকির সাথে নিচের দৃশ্য মেলানোর চেষ্টা করি। ম্যাপে বলছে এয়ারপোর্টের একটু আগে লেক আছে। নিচে তাকিয়ে ওই লেক দেখতে পেলে দারুণ খুশি লাগে!

টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ১৭৬৩ নং ফ্লাইটে বসে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ফিনল্যান্ডের ম্যাপ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ঘন নীল সমুদ্রে হঠাৎ যেন ধূসর আস্তরণ পড়েছে। আস্তরণ আস্তে আস্তে জীবন পাচ্ছে। রং-বেরঙের বোট নীল পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপর থেকে দেখতে বোটগুলোকে ফড়িংয়ের মতো লাগছে।

আমার হতভম্ব হওয়ার কারণ হচ্ছে নিচের দৃশ্য। আমার ট্যাবে খুলে রাখা ম্যাপের সাথে ডাঙার ম্যাপ পুরোপুরি মিলে গেছে। স্ক্রিনের ম্যাপের প্রতিটা আঁকিবুঁকি আলাদা করে দেখতে পাচ্ছি। ম্যাপ বলছে এক জায়গার শেপ ঠিক জুতার মতো। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আমি অবিকল জুতার শেপটা দেখতে পেলাম। আমার আনন্দ দেখে কে!

এর আগে যত জায়গায় গিয়েছি ম্যাপের সাথে আসল দৃশ্য মেলানোর চেষ্টা করেছি। খুব একটা লাভ হয়নি। একটু আগে ইস্তাম্বুলে নামার সময়ই তো। ম্যাপ বলছিল ইস্তাম্বুলের অবস্থানটা বেশ ইন্টারেস্টিং। উপর-নিচে সাগর, মাঝখানে করিডোরে ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট। অনেক চেষ্টা করেও প্লেন থেকে এই ‘করিডর’ বোঝা গেল না। সেই তুলনায় ফিনল্যান্ডের দক্ষিণের ম্যাপের সাথে বইয়ের ম্যাপ অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে।

এসব ভাবতে ভাবতে ল্যান্ড করে ফেললাম। বাইরে তাকিয়ে খুব একটা আহামরি মনে হলো না। বেশ সাদামাটা। ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টের তুলনায় রীতিমতো ফাঁকা। সব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক প্লেন ল্যান্ড করে আছে। কাচঘেরা টার্মিনালের ওপর বড় করে লেখা, হেলসিংকি এয়ারপোর্ট। সাথে সাথে মাথায় এলো,  ইউরোপে চলে এসেছি।

প্রথম ধাক্কাটা লাগলো টার্মিনাল দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময়। এত নীরব কেন? এয়ারপোর্ট এত নীরব হয় নাকি? এর আগে ইস্তাম্বুলে টার্মিনালে ঢোকার সময় তো গুলিস্তান মনে হচ্ছিল। ছয়-সাতটা এয়ারপোর্ট ঘোরার সৌভাগ্য হয়েছে। কোনোটাই এতটা নীরব মনে হয়নি। শুধু নীরব যে তা না, আমরা ছাড়া আর কোনো প্যাসেঞ্জার নেই। এয়ারপোর্ট মানেই রেল স্টেশনের অতি উন্নত সংস্করণ। মানুষের দৌড়াদৌড়ি, লাগেজের গুঁতাগুঁতি থাকার কথা। এগুলো না  থাকলে কীভাবে হয়?

শান্তশিষ্ট, ছিমছাম এয়ারপোর্টে আমরা লাগেজ নিয়ে হেলেদুলে আগালাম। সেদিন আমাদের দশজনের বেশি বাংলাদেশির একসঙ্গে ফ্লাইট ছিল। সবাই এবার ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে চান্স পেয়েছি। মা-বাবাকে ফেলে অনেকেরই এই প্রথম বাইরে আসা। ঢাকা এয়ারপোর্টে কান্নাকাটি তাই কম হয়নি। যে দুয়েকজন এখনো চোখ মুছছে তাদের মধ্যে আমিও আছি। বিশেষ করে হেলসিংকি পৌঁছানোর পর কেমন যেন দম আটকে আসছে। কী আশ্চর্য… সাড়ে ছয় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমি আসলেই ফিনল্যান্ড চলে এসেছি?  অন্তত দুই বছর প্রিয় মানুষগুলোকে দেখতে পাব না? চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা হবে না?

বিরহের চিন্তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়াতে হলো। ফিনিশদের লাইনেও দাঁড়াতে হলো না, পাসপোর্ট কিংবা কার্ড দেখিয়ে তারা পটাপট ঢুকে গেল ভেতরে। অর্থাৎ আমাদের ঢাকা এয়ারপোর্টের ঠিক উল্টা। ঢাকায় আমরা লাইনে দাঁড়াই, বিদেশিরা পটাপট পার হয়ে যায়। এখানে আমরা বিদেশিরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, ফিনিশরা পার হয়ে যাচ্ছে।

আমার পালা এলো। কাউন্টারে দাঁড়াতে টাকমাথা নীল চোখের অফিসার বললেন, ‘হ্যালো।’

আমি একগাল হেসে বললাম, ‘তের্ভে।’ ফিনিশ সম্বোধন। ইমিগ্রেশন অফিসার হেসে দিলেন। খুব বেশি বিদেশি নিশ্চয়ই ফিনিশ ভাষায় তাকে হ্যালো বলে না!

রেসিডেন্ট পারমিট কার্ড দেখালাম। ইউনিভার্সিটির অফার লেটার দেখালাম। সব মিলিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করতে ঠিক দু’মিনিট লাগল। মেইন লাউঞ্জে এসে শান্ত হয়ে বসে বড় করে শ্বাস নিলাম। এখন থেকে তাহলে আমি অফিশিয়ালি প্রবাসী।

চারপাশে তাকালাম। লাউঞ্জটা বেশ বড়। মাঝখানে সারি বাঁধা কাচের বাক্সে নানা জীবজন্তু স্টাফ করে রাখা। পরিচিত জন্তুর মধ্যে পোলার বিয়ার আর রেইনডিয়ার চোখে পড়ল। দেয়ালে অনেক বিশাল টিভি, অনবরত অ্যাড চলছে। আমরা ছাড়া কোনো জনমানুষ নেই, এমনকি এয়ারপোর্টের কোনো স্টাফ-ও না।

এয়ারপোর্টে ফ্রি ওয়াই-ফাই ছিল। বাসায় কল দিলাম নেটে। অন্য বাংলাদেশিরাও ইমিগ্রেশন শেষ করে লাউঞ্জে জড় হয়েছেন। যে যার গন্তব্যে যাবেন। তবে এবার গন্তব্য কেবল দুইটা। তাম্পেরে ও অউলু। এই দুটি শহরের স্টুডেন্টরাই মূলত আজকে এসেছি। এর মধ্যে বেশির ভাগ তাম্পেরের। অউলুর আছি তিনজন। তাম্পেরের বাস কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়বে, সেটার যাত্রীরা চলে গেলেন। অউলুর তিনজন আছি কেবল—আমি, মাহমুদুল ভাই ও নুভান ভাই। ওনারা দুজন যাবেন বাসে, আমি ট্রেনে। যত দূর জানি এয়ারপোর্টের ভেতরই একটা ট্রেন স্টেশন আছে। আমি ওনাদের বিদায় দিয়ে ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম।

শুরুতে এয়ারপোর্টটা যত ছোট মনে হয়েছিল এখন আর তত ছোট মনে হচ্ছে না। ইস্তাম্বুল ছাড়া ইউরোপের আর কোনো এয়ারপোর্টে যাইনি, তাই তুলনা দিতে পারছি না। কিন্তু ইস্তাম্বুলের চেয়ে অনেক গোছানো। লাউঞ্জ এরিয়া পার হওয়ার পর লম্বা করিডর। বাম পাশে সারি ধরে ডিউটি ফ্রি শপ আর খাওয়ার দোকান। ডানপাশে কাচের ওপাশে হেলসিংকি শহর দেখা যাচ্ছে। আমি ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ট্রেন স্টেশন খুঁজতে লাগলাম। আমার যাত্রার দ্বিতীয় কিস্তি এখন—রাজধানী হেলসিংকি থেকে উত্তরের ছোট্ট শহর অউলু।

ট্রেনের টিকেট তো কাটা দরকার। তাড়াহুড়ায় অন্যদের মতো আগে বুকিং দিতে পারিনি। তাই স্টেশন থেকেই কাটতে হবে টিকেট। বামপাশে বড় একটা ইনফর্মেশন ডেস্ক চোখে পড়ল। এগিয়ে গেলাম। স্যুট-টাই পরা হাসিখুশি চেহারার এক তরুণ বসে আছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, ‘টিকেট অফিস’ বলে কিছু নেই। সবুজ রঙের কিয়স্ক থেকে টিকেট কাটতে হবে। কিংবা অনলাইনে। দুই ক্ষেত্রেই ব্যাংক কার্ড লাগবে।

আমি শুকনো মুখে বললাম, ‘নো ক্যাশ? আমার কাছে তো ক্যাশ ইউরো ছাড়া কিছু নেই।’

‘নো ক্যাশ’, তরুণের ঝকঝকে হাসি।

মনে মনে দমে গেলাম। কি কুক্ষণে যে আগে টিকেট না কেটে এসেছি! হিউভিন মেনির বই থেকে বেশ করে দেখে এসেছিলাম ট্রেনের টিকেট কীভাবে কাটব। কাউন্টারে ইংরেজি না বুঝলে ফিনিশে বললেই হবে ‘ইউনালিপ্পু’, অর্থাৎ ট্রেন টিকেট। ফিনিশ পর্যন্ত তো যাওয়া লাগল না। ইংরেজিতেই বুঝিয়ে দিল টিকেট কাউন্টার বলে কিছু নেই।

আমার অবস্থা দেখেই বোধহয় কাউন্টারের তরুণের মায়া হলো। জিজ্ঞেস করল, ‘জাস্ট অ্যারাইভড?’

‘ইয়েস।’

‘আরেকটা কাজ করতে পার। ট্রেনে উঠে সরাসরি টিকেট কাটতে পারো কন্ডাক্টরের কাছ থেকে। দাম একটু বেশি পড়বে।’

আমি যেন চাঁদ হাতে পেলাম, ‘ঠিক বলছো? ট্রেনে ওঠার পর টিকেট কাটতে পারব? ক্যাশ দিয়ে?’

‘হ্যাঁ।’

ব্যাটা এতক্ষণে এই কথা বলছে! ফিনিশদের বিখ্যাত ‘অতিরিক্ত কথা না বলা’ স্বভাবের কথা জেনেই এসেছি। উদাহরণ এয়ারপোর্টেই দেখতে পাব ভাবিনি।

আমি ‘থ্যাংক ইউ’ দিয়ে অউলুর ট্রেনের টাইমটেবিল জেনে নিলাম। ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১১টায়। অউলু পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। এয়ারপোর্ট থেকে এই ট্রেন ছাড়বে না, আগে তিক্কুরিলা নামে একটা স্টেশনে যেতে হবে। হেলসিংকি এয়ারপোর্ট থেকে মেট্রোতে তিক্কুরিলা যেতে লাগে ১০ মিনিট।

সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। মেট্রো স্টেশন গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আমি যেখানে আছি সেখান থেকে লম্বা এসক্যালেটর নেমে গেছে। এসক্যালেটরের শুরুতে বড় করে লেখা, নো ট্রলি বেয়ন্ড দিস পয়েন্ট।

দুই বিশাল লাগেজ এবং দুই হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে এই এসক্যালেটর পাড়ি দিতে হবে। চিন্তা করেই গলা শুকিয়ে গেল। বিসমিল্লাহ বলে বড় লাগেজ দুইটা সামনে কোনমতে ধরে পিঠে হ্যান্ডব্যাগ ঝুলিয়ে এসক্যালেটরে দাঁড়ালাম। এবং যা ঘটার কথা তাই ঘটল। ছোট লাগেজটা হাত ফসকে বিকট ধপাস ধপাস শব্দে এসক্যালটর বেয়ে নামতে থাকল। পিনপতন নীরব এয়ারপোর্টে শেষ কবে এমন শব্দ হয়েছে কে জানে।  নিশ্চিত বোমা মনে করেছে লোকজন। আমি কোনোমতে বাকি লাগেজগুলো ধরে ঘামতে লাগলাম। জীবনের দীর্ঘতম এসক্যালেটর রাইড শেষ হতে লাগল এক মিনিটের মতো, আমার কাছে মনে হলো এক ঘণ্টা।

আমি নিচে নেমে এদিক-ওদিক তাকালাম। অল্প কয়েকজন মানুষ ঘোরাফেরা করছে। বিকট শব্দে কারো কোনো বিকার নেই। এ যাত্রা বেঁচে গেছি মনে হচ্ছে!

তখনি দেখি আমার ডানপাশে অবাক চোখে এক ফিনিশ তাকিয়ে আছে। উজ্জ্বল কমলা রঙের জ্যাকেট পরা। এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি নাকি? মনে মনে ভড়কে গেলাম। লাগেজগুলো একত্র করে হাই বলতে যাব, এমন সময় লোকটা একদিকে আঙুল দেখিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল, ‘তুমি লিফট ইউজ করলে না কেন?’

আমি হতাশ চোখে তাকালাম। এসক্যালেটরের একটু পাশেই লিফট। বড় করে লেখা আছে, হিসসি। ইংরেজিতে কিছু লেখা নেই। ট্রেন টিকিটের আগে এই শব্দটা শেখা বেশি জরুরি ছিল।

আমি শুকনো মুখে বললাম, ‘আমি মাত্র এসেছি ফিনল্যান্ড। কোনটা লিফট বুঝতে পারিনি। আই অ্যাম সরি।’

লোকটা অবাক চোখে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকল। তারপর হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে আমার পিঠ চাপড়ে বলল, ‘ইটস ওকে ম্যান! ওয়েলকাম টু ফিনল্যান্ড! আমি ইয়রি। তুমি?’

‘হাসান ফ্রম বাংলাদেশ’, হাত বাড়িয়ে দিলাম। বুঝতে পারছি না আমারও হাসা উচিত কি না।

‘হাসান, নাইস টু মিট ইউ! চল, আমি তোমাকে হেল্প করব!’

আমি কিছু বলার আগে ইয়রি নামের ভদ্রলোক আমার একটা লাগেজ আর একটা হ্যান্ড ব্যাগ তুলে নিল।

১০ মিনিটের মেট্রো যাত্রা শেষে আমার মাথা বোঁ বোঁ করতে লাগল। ট্রেনের আলাপ থেকে জানলাম, আমার লাগেজ বহন করা ইনি কোন সাধারণ মানুষ নন। রীতিমতো স্পোর্টস সেলিব্রেটি। তুক্কিলাইসেত নামে অতি দুরূহ এক খেলা খেলেন। ইংরেজিতে বলে ফ্লোটিং লাম্বারজ্যাক। লেকের পানিতে একটা গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়। ওই গুঁড়ির পর দাঁড়িয়ে এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। যাওয়ার সময় নানা কসরত করতে হয়। পানিতে পড়ে গেলেই শেষ। ফিনল্যান্ডের খুবই ট্র্যাডিশনাল একটা স্পোর্টস। এর খেলোয়াড়দের সংখ্যা খুবই নগণ্য, এবং যারা খেলে তাদের অন্যরকম সম্মান দেওয়া হয়।

আমার সদ্য পরিচিত ইয়রি মিক্কোনেন ফিনল্যান্ডের সেরা লাম্বারজ্যাক প্লেয়ার। এই খেলায় তার মতো স্টান্ট আর কেউ দেখাতে পারে না। মাঝে মাঝেই তাকে নিয়ে পত্রিকায় নিউজ হয়। তার খেলা অনলাইনে মিলিয়ন মানুষ দেখেছে। লাম্বারজ্যাকের জন্য গিনেজ বুক অব রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ তাকে এই নভেম্বরে ইউএসএ আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এখন সে গিনেজ বুকে নাম তোলার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে।

এই কয়েকদিন আগেই বিজনেস ইনসাইডারও ইয়রিকে নিয়ে নিউজ করেছে-http://nordic.businessinsider.com/these-finnish-lumberjacks-are-making-the-internet-go-crazy-2016-8

তিক্কুরিলা স্টেশন থেকে অউলুর ট্রেনে ওঠা পর্যন্ত ইয়রি আমার সাথে ছিল। মাঝে দুয়েকজনকে অটোগ্রাফও দিল। আমি ট্রেনে ওঠার সময় বিড়বিড় করে বললাম, ‘হোয়াট আ স্টার্ট!’

‘কিছু বললে আমাকে?’ ইয়রি বলল।

‘না না। তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব…’

‘ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না। কেবল ধৈর্য ধর। মানুষ হিসেবে আমরা ফিনরা খারাপ নই। শুধু কথা কম বলি আরকি।’

আমি আবার বিড়বিড় করলাম, ‘তোমরা সেলিব্রেটি হয়ে আরেকজনের লাগেজ টান। কথা কম বললেই কী আর বেশি বললেই কী!’

‘স্যরি, আমাকে কিছু বললে?’

‘হ্যাঁ। আমার নিজের ল্যাঙ্গুয়েজে তোমাকে ধন্যবাদ দিলাম।’

অউলুর ট্রেনে উঠলাম। কোনো  হুইসেল নেই, স্টেশন মাস্টার নেই। যতটা নিঃশব্দে ট্রেনটা এসে দাঁড়িয়েছিল, ততটা নিঃশব্দে ছেড়ে গেল স্টেশন। পিনপতন নীরব কামরায় সিটে হেলান দিলাম। নিঃশব্দের জীবন শুরু…

Leave a Reply