আমার দেখা সুন্দরবন

Share on Facebook

তখন আমি অনেক ছোটো, বয়স কত আর
হবে ৫ কি ৬ বছর। পড়াশোনার চাপ আর অন্যান্য জটিলতা বুঝতে শিখিনি। তখন বেড়াতে যাওয়া মানেই অপার আনন্দ, সীমাহীন উচ্ছাস। ওই সময়ে বেড়ানোর সীমা ছিলো দাদুবাড়ি আর নানুবাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। অবশ্য ওই বয়সেই জানা হয়ে গিয়েছিল বিদেশ নামে একটা দেশ আছে। ওটা অনেক দূর। একমাত্র বড়রাই যেতে পারে। আমার ছোটো চাচা প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন, বিদেশেও সফর করতেন। উনার কাছ থেকেই বিভিন্ন জায়গার নাম শুনতাম, গল্পের মত মনে হত। ছোটো চাচার কাছেই প্রথমে সুন্দরবনের নাম শুনি। উনার কাছ থেকেই জানি যে সুন্দরবনই বিশ্বের সবথেকে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। ছোটো চাচা সুন্দরবনের প্রতি এক ধরণের কৌতূহল তৈরী করে দিলেন। এরপর টিভিতে আর ইউটিউবে সুন্দরবনের বিভিন্ন ভিডিও দেখে কৌতূহল যেনো আরও বেড়ে গেলো। মনের ভেতর আক্ষেপ- আহা, একবার যদি সুন্দরবনে যেতে পারতাম! এর
কিছুদিন পর হঠাত ঘটে গেলো এক
অভাবনীয় ঘটনা। একদিন ছোট চাচা জানালেন, আমাদের পুরো পরিবারকে নিয়ে সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়ার কথা। ব্যাস আমার খুশি আর
দেখে কে! ১০-১২ জন চাচাতো ফুফাতো কাজিন মিলেমিশে আনন্দ আরো ১০০ গুণ বাড়িয়ে দিলো। সুন্দরবনে যাবার প্রস্তুতি যেন আমাদের শেষই হচ্ছিল না!
উত্তেজনায় একেকজনের ঘুমই হচ্ছিল না । নির্ধারিত দিনে ছোটো চাচার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হলো সুন্দরবনের পথে। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত আমরা গেলাম রাতের বাসে। সারারাত আনন্দ ফূর্তি করতে করতে ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পরেছি মাত্র, তারপরেই ডাকাডাকি, এই চলো চলো বাস থেকে নামতে হবে। বাস থেকে নেমে ঘুম ঘুম চোখেই জাহাজে গিয়ে উঠলাম।

জাহাজে সুন্দরবন যাওয়ার পথে অসীম বিস্ময়ে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাঝিরা আপন মনে মাছ ধরছে। সুন্দরবনের নামটা যেমন সুন্দর দেখতে তার থেকেও বহুগুণ সুন্দর। সুন্দরবনে বিভিন্ন জীবজন্তু থাকে – এটা ছোটো চাচার কাছে জেনেছি, টিভি আর ইউটিউবে দেখেছি। মনে খুব ভয়, এরপরও আশা যে, যদি একবার বাঘ দেখা যায়। এছাড়া হরিণসহ অন্যান্য জীবজন্তু প্রাণীকুল তো দেখবোই। আমরা জাহাজে থাকার সময়েই একদিন জাহাজটি নদীর স্রোতে খুব দুলছিলো। আমরা যারা ছোটো ছিলাম তারা সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে কিছুক্ষণ পরই দোলাদুলি থেমে গিয়ে জাহাজটি স্থির হয়ে গেল। মনের সব ভয় এক নিমিষে কেটে গেল। পরে চাচার কাছে জানতে পারলাম আমরা সমুদ্রের খুব কাছ দিয়ে চলে এসেছি।  জাহাজ থেকে নেমে নৌকায় করে সুন্দরবনের খালের ভেতরেও ঘুরেছিলাম। কি যে সুন্দর সুন্দরবন। নৌকায় ঘুরাঘুরি করে যখন জাহাজে ফিরলাম তখন দুপুর। সেদিন আমরা সবাই একসাথে কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। বিরিয়ানি খাওয়ার পরে দৈও খেয়েছিলাম মনে আছে। খাওয়া শেষে আমরা সমবয়সীরা জাহাজের ডেকে বসে বাঘ ভাল্লুক নিয়ে গল্প শুরু করলাম। এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। কাজিনরা মিলে বুদ্ধি করলাম যে জাহাজের ছাদে উঠে বৃষ্টিতে গোসল করব। বৃষ্টিতে গোসল করতে করতে আমাদের সমবয়সী আরও তিনজন মেয়ের সাথে পরিচয় হলো। তাদের মধ্যে একজনের নামও ছিল বৃষ্টি। ওদের সাথে অনেক গল্প হলো। তারপরের দিন জাহাজে থাকা বড়রা আমাদের খেলার জন্য হাড়িভাঙ্গা খেলার আয়োজন করলো। ওই খেলায় বৃষ্টি নামের মেয়েটা জিতে গেল। তার পুরষ্কার হিসেবে ছিল এক বক্স চকলেট। বৃষ্টি চকলেট পেলেও সবাই মিলেমিশে ওই চকলেট খেলাম। এরপর দিন আমাদের সকলের মন খারাপ। কারণ, বড়রা জানালেন বাসায় ফিরে যাবো। মনে মনে বললাম- ‘বড়রা যে কি! আর ক’টা দিন থেকে গেলে কি হয়!’ কষ্ট ভরা মন নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম। সুন্দরবন থেকে ঘরে যাওয়ার আগে বড়রা মৌয়ালদের কাছ থেকে কিছু মধু কিনলেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর স্কুলের বন্ধুদের কাছে সুন্দরবন ভ্রমণের গল্প শেয়ার করলাম। তারা কৌতূহল নিয়ে সুন্দরবনের গল্প শুনলো। আমি জানি, তারা মনে মনে বলছে- ইশ! একবার যদি সুন্দরবনে যেতে পারতাম!

লেখকঃ ইমাম মেহেদী সাদিস

বয়সঃ ১৩ বছর

Leave a Reply