অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধর্মীয় পর্যটন

Share on Facebook

পৃথিবীর যেকোন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে পর্যটন শিল্প ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে কক্সবাজার অঞ্চলে নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলছে। অত্যাধুনিক এইসব পার্কগুলোতে পাঁচ তারকা মানের হোটেল থেকে শুরু করে কেবল কার, প্যারা সেইলিং, স্কুবা ডাইভিং, ঝুলন্ত সেতু, রিভারক্রুজ, ইকো- কর্টেজ, শিশুপার্ক ও ভাসমান রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যটন সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশের পর্যটন প্রসারের সাথে সাথে এই পার্কগুলোয় প্রায় লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। এখানে সুন্দরবন, কক্সবাজার ছাড়াও টাঙ্গুয়া হাওর, হাকালুকি হাওর, রাঙামাটি, বান্দরবান, সিলেটের চা বাগান, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসহ অসংখ্য পর্যটন গন্তব্য রয়েছে। এসব আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যের বাইরেও ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণের কারণে বাংলাদেশে কিছু বিজনেস ট্রাভেলারের আগমন ঘটে। ফলে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বড় শহরগুলোতে গড়ে উঠছে তিন/চার/পাঁচ তারকা মানের হোটেল। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি এসব বড় বড় হোটেলগুলোতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিকাশমান পর্যটন খাতের অবদান দিনে বাড়ছে।

WORLD TRAVEL AND TOURISM COUNCIL (WTTC) এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে জাতীয় আয়ে পর্যটন খাতের অবদান ছিলো ৪২৭.৫ বিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ২.২ শতাংশ। ২০১৯ সালের জিডিপিতে এই অবদান এসে দাঁড়ায় ৪.৭ শতাংশে। WTTC এর মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১১ লাখ ৩৮ হাজার পেশাজীবি প্রত্যক্ষভাবে পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে ২০২০ সালে ১৮ লাখের বেশি মানুষ এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত।

বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি যুগোপযোগী সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তিনি ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ধর্মীয় পর্যটন বিকাশের কথা বলেছেন। ইসলামী পর্যটনের বিশাল আকার ও বিপুল সম্ভাবনা বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে এসে হবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম। থমসন-রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে ইসলামী পর্যটনের বাজার ছিল ১৫১ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের বাজার ছিল প্রায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইসলামী পর্যটনের বাজার বার্ষিক ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদের শহর হিসেবে ঢাকা শহরের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর নকশা পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা শরীফের আদলে তৈরি করা, যেখানে একসঙ্গে প্রায় চল্লিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শুধু মুসলিমদের জন্যই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঢাকায় রয়েছে বিখ্যাত আর্মেনিয়ান গির্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সুন্দর সুন্দর স্থাপনা।

বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, প্রাচীন ও আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইসলামিক স্থাপনা ইত্যাদি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। বৈচিত্র্যময় এই পর্যটন খাতকে পরিকল্পিত উপায়ে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ধর্মীয় পর্যটনই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত।

 

অনন্যা মজুমদার
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।

Leave a Reply