সুযোগ শেষ হলো উলুরুর লাল পাহাড়ে চড়ার

Share on Facebook

অস্ট্রেলিয়ার উলুরুতে বিশাল লাল রঙা পাথুরে পাহাড় ‘আয়ার্স রক’ সারাবিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এর উচ্চতা ১ হাজার ১৪২ ফুট। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে উঁচু এটি। পাহাড় আকৃতির এই বিশাল পাথরখণ্ডটি স্থানীয় আনাঙ্গু জনগোষ্ঠীর কাছে একটি পবিত্রস্থান। দীর্ঘদিন থেকেই এর ওপর পর্যটক ওঠা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল তারা। তাদের ওই দাবির প্রেক্ষিতে আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

শেষবারের মতো পাথরটির ওপরে উঠতে গতকাল ভিড় করেছিলো পর্যটকেরা।

একারনে শেষবারের মতো পাথরটির ওপরে উঠতে গতকাল
২৫শে অক্টোবর (শুক্রবার) ভিড় করেছিলো পর্যটকেরা। ভ্রমণপ্রেমীদের একটি দল
রোদের উত্তাপ মাথায় নিয়ে শেষবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম স্বীকৃত জায়গাটিতে
আরোহণ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সিডনির একজন দর্শনার্থীর ভাষায়, ‘চূড়ায় ওঠার পর মনে হয়েছে অন্য গ্রহে এসেছি!’
তবে, তাদের শখ পূরণে বাঁধ সেধেছিলো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, গতকাল ঝড়ো বাতাসের কারণে উলুরুতে আরোহণ বেশ দেরিতে শুরু হয়। এতে
রীতিমতো লাইন লেগে যায় পর্যটকদের। অথচ মাসখানেক আগেও সেখানে এত ভিড় ছিল না। উলুরুর
এই অবস্থাকে তুলনা করা হচ্ছে কিছুদিন আগে মাউন্ট এভারেস্ট পরিস্থিতির সঙ্গে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে সেসময় লাইন দিতে হয়েছিল পর্যটকদের।

শেষবারের মতো পাথরটির ওপরে উঠতে গতকাল ভিড় করেছিলো পর্যটকেরা।

উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্কের ম্যানেজার
মাইক মিসো অস্ট্রেলিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক এসবিএসকে জানান, দিনে হাজারের কাছাকাছি মানুষ এতে আরোহণ করেছে। ২০১৫ সালে উলুরুতে তিন
লাখ পর্যটক সমাগম হয়। তাদের মধ্যে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ পাহাড়ে ওঠেন। দিনে এই সংখ্যা
ছিল ১৩৫ জন। অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ২০১৭ সালে মাত্র ১৭ শতাংশ পর্যটক ওপরে
উঠেছিলেন। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ফের দর্শনার্থীরা চূড়ান্ত উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

লাল রঙা পাথুরে পাহাড় ‘আয়ার্স রক’

১৯৮৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের
তালিকাভুক্ত হয় উলুরু।  ২০১৭ সালে
উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ জায়গাটির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত কারণে এর ওপর আরোহণ নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেয়।রামেথ
থমাস নামের একজন আনাঙ্গু বলেন, উলুরু আমাদের কাছে অত্যন্ত
পবিত্র জায়গা, অনেকটা গির্জার মতো। বিশ্বের লোকজন এখানে আসে
আর উঠে পড়ে। তাদের মাঝে কোনো সম্মানবোধ নেই।

অস্ট্রেলিয়ানদের বিশ্বাস, মরুভূমি ফুঁড়ে ওঠা পাথরটির একধরনের গুঁড়া রয়েছে। তাদের কাছে এ জায়গার মতো আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বিশ্বের আর কোথাও নেই।

পর্যটকদের অনেকেই সম্মান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে।

বিভিন্ন কারণে উলুরুর লাল পাহাড়ে আরোহণ নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলীয় সরকার। এর মধ্যে অন্যতম প্রবল বাতাস। এ কারণে শুক্রবারও হিমশিম খেতে হয়েছে অভিযাত্রীদের। এছাড়া গ্রীষ্মে এলাকাটির তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। এ কারণে ডিহাইড্রেশনসহ তাপসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দর্শনার্থীদের। পঞ্চাশের দশক থেকে অন্তত ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এতে। এখানে হাঁটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ৩৪৮ মিটার উচ্চতার পাথরটি বেশ খাড়া ও পিচ্ছিল। ১৯৫০ সাল থেকে উলুরুতে দুর্ঘটনা, পানিশূন্যতা বা তাপদাহের কারণে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গতবছরও পাথরটির একটি ঝুঁকিপূর্ণ চূড়ায় উঠতে গিয়ে ৭৬ বছর বয়সী এক জাপানি পর্যটক মারা গেছেন।

Leave a Reply