বিশ্বাসে ভরা বাগেরহাটের ঘোড়া দীঘি

Share on Facebook

খান
জাহান আলী নামের সাথে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চল জড়িয়ে রয়েছে অবিচ্ছেদ্ধভাবে। এ
অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যে খান জাহান আলীর অবস্থান উল্লেখযোগ্য। তি্নি ছিলেন একজন
ইসলাম ধর্মপ্রচারক এবং শাসক। উলুঘ খান, খান-ই-আজম হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিলো। দিল্লী থেকে
বাংলায় আগমনের পর তিনি বাগেরহাট জেলা সদরের ষাট গুম্বজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে
খান জাহান (রহ:) যে হাবেলী বা প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ঐ সময় এই অঞ্চলে তিনি
নানা ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করে থাকেন। ষাটগম্বুজ মসজিদ তাঁর অন্যতম কীর্তি। শোনা
যায় তিনি এই অঞ্চলে ৩৬০ টি মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি এলাকার সুপেয় পানির ব্যবস্থা
করার জন্য খনন করেন ৩৬০ টি দীঘি।

এখানে ষাট গম্বুজ মসজিদের পাশেই রয়েছে ঘোড়া দীঘি। এটি ষাট গম্বুজ দীঘি নামেও পরিচিত। মনে করা হয় এটি খান জাহান আলী কর্তৃক খননকৃত প্রথম দীঘি। নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ এর বিপরীতে না থাকলেও ধারণা করা হয় খান জাহান আলী এ অঞ্চলে প্রথম প্রবেশ করে যে স্থানে তাঁর সৈন্যদের ব্যারাক স্থাপন করেন (বর্তমানে নাম বারকপুর) এবং সেখানেই তিনি প্রথম দিঘী খনন করেন। বারকপুরের সবচেয়ে কাছাকাছি দীঘি এই ঘোড়া-দিঘী।

প্রায় দু’শ’ একর জুড়ে বিশাল দীঘি। স্বচ্ছ জলরাশির চারদিকে ২০ ফুট উচু বাঁধ। দেখতে
খানিকটা বেড়িবাঁধের মতো। মাটির বাঁধের বাইরে ঘিরে রয়েছে পায়ে হাঁটার পথ। পথের কিছু
অংশ মেঠো, কিছুটা ইট বিছানো। শুধু পশ্চিম দিকের অংশটি
পিচঢালা। এদিকটায় প্রশস্ততাও কিছুটা বেশি। প্রায় ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার মতো। আর
এই রাস্তা, মাটির বাঁধ ঘন সবুজে ঢাকা। বাঁধের ফাঁকে ফাঁকে
অল্প ক’টি বাড়ি।

পুরোপুরি বর্গাকৃতির
দীঘিটির একপাড় থেকে আরেকপাড় দৃশ্যমান হলেও স্পষ্ট নয়। উত্তরে বাঁধানো ঘাট সোজা উঠে
গেছে খানজাহানের সমাধিতে। ঝকঝকে তকতকে সেই ঘাটে শতশত পূণ্যার্থী গোসল করছেন।
যদিও ঘাটে সাইনবোর্ডে
লেখা রয়েছে পুকুরে ভয়ঙ্কর কুমির রয়েছে। গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

দীঘিটির
নামকরণ নিয়েও প্রচলিত রয়েছে কিছু কিংবদন্তী। বলা হয়ে থাকে একটি ঘোড়া এক দৌড়ে যতদূর
গিয়েছিল, ততটা জায়গা নিয়ে দীঘি খনন করায় এর নাম ঘোড়া-দিঘী হয়। আবার সুপেয় পানির
অভাব দূর করতে দীঘি খননের পর খান জাহান দিঘীর চারপাশে ঘড়া নিয়ে চড়তেন বিধায়
দিঘীটির এমন নামকরণ করা হয়।

এছাড়াও,
আরেকটা ধারণা মতে এই স্থানে খান জাহানের সৈন্যদের কুচকাওয়াজ ও ঘোড়দৌড় হতো বলে দীঘি
খনন করার পর দিঘিটি এই নামে পরিচিত পায়। পূর্ব পশ্চিমে লম্বা এই
দিঘীটির আয়তন ২০০০’*১২০০’। গভীরতা স্থান ভেদে
২৪/২৫ ফুট।

Leave a Reply