এভিয়েশন ইন্ড্রাষ্ট্রিতে এগিয়ে আছে যেসব কোম্পানি

Share on Facebook

১. বোয়িং
বিশ্বের অন্যতম নামকরা বেসরকারি যাত্রীবাহী বিমান নির্মাতার মধ্যে প্রথমেই নাম আসে বোয়িং কোম্পানির। বর্তমান বিশ্বের ১৫০ টি দেশের সরকারি এবং বেসরকারি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বোয়িং কোম্পানির বিমান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বোয়িংয়ের ৭৭৭, ৭৬৭, ৭৪৭, আর ৭৩৭ বিমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সবথেকে বেশি। শিকাগোতে অবস্থিত এই কোম্পানির বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ৯২.৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। যার ৩২ শতাংশ পরিমাণ অর্থ আসে বিভিন্ন দেশের মিলিটারী এবং প্রতিরক্ষা বিভাগ হতে। সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণ ছাড়াও হেলিকপ্টার, মিসাইল, স্যাটেলাইট এবং অত্যাধুনিক কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরিতেও এগিয়ে রয়েছে বোয়িং। বর্তমানে বোয়িং কোম্পানিতে নিযুক্ত রয়েছে দেড় লাখেরও বেশি কর্মচারী।

এয়ারবাস গ্রুপ-

২. এয়ারবাস গ্রুপ        
বোয়িং নামের পরপরই চলে আসে এয়ারবাসের নাম। ১২৯.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির অধিকার এই কোম্পানির ১৮.১ শতাংশ অর্থ আসে মিলিটারী ও প্রতিরক্ষা বিভাগ হতে। যাত্রীবাহী বিমান ছাড়াও প্রাইভেট জেট, কার্গো বিমানও নির্মান করে এয়ারবাস কোম্পানি। এছাড়াও প্রস্তুত করে সেনাবাহিনীর জন্য ট্রান্সপোর্ট বিমান ছাড়াও স্পেশাল মিশন বিমান। এয়ারবাসের সদরদপ্তর ফ্রান্সে অবস্থিত হলেও সারাবিশ্বে এর ১২টি নির্মাণ সাইট রয়েছে। এখানে চাকরি করছে পঞ্চাশ হাজারের বেশি কর্মচারী।

বোম্বার্ডিয়ার –

৩. বোম্বার্ডিয়ার
এভিয়েশনে এগিয়ে থাকা কোম্পানির কথা ভাবলে তিন নম্বরে এই কানাডিয়ান কোম্পানির নাম বলা যায় নিশ্চিন্তে। প্রায় ৭৬ বছরের পুরানো এই কোম্পানির বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের মত। ৫টি মহাদেশের ৬০টি দেশ বোম্বার্ডিয়ার কোম্পানির নির্মিত বিমান ব্যবহার করে। আমাদের দেশে এই কোম্পানির ড্যাস এইট মডেলের বিমান ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিমান, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। বর্তমানে এই কোম্পানিতে নিযুক্ত আছে ৩২ হাজারের বেশি কর্মচারী।

লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন

৪. লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন
এভিয়েশন ইন্ড্রাস্টিতে নতুনই বলা চলে এই কোম্পানিকে। ১৯৯৫ সনে প্রতিষ্ঠিত এই অ্যামেরিকান কোম্পানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার মেরিল্যান্ডে অবস্থিত এই কোম্পানির বর্তমান লোকবল ১ লাখের বেশি। বেসরকারি যাত্রীবাহী বিমান ও কার্গো বিমান, মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট, যুদ্ধ বিমান, মিসাইল এবং স্যাটেলাইট কোনো ক্ষেত্রেই এই কোম্পানি পিছিয়ে নেই। ইনফরমেশন সিকিউরিটি ছাড়াও স্পেসক্রাফ্ট এবং ডিফেন্স সেক্টরের অসংখ্য পণ্যও উৎপাদন করে। এছাড়া বর্তমানের অসংখ্য অত্যাধুনিক মিলিটারী অস্ত্রেরও আবিষ্কারক লকহিড মার্টিন।

ইউনাইটেড টেকনোলজি কর্পোরেশন-

৫. ইউনাইটেড টেকনোলজি কর্পোরেশন
প্রায় ৮৪ বছরের পুরাতন এই অ্যামেরিকান কোম্পানি অবস্থিত ফার্মিংটনে। সর্বমোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৬ বিলিয়ন ডলার যার ২০ শতাংশ আসে সামরিক খাত হতে। এই কোম্পানি মূলত বিমান নির্মাণ না করে সামরিক এবং বেসামরিক বিভিন্ন বিমানের ইঞ্জিন তৈরি করে থাকে। এছাড়া স্পেসক্রাফ্টের যন্ত্রাংশ, সিকিউরিটি সিস্টেম এবং বিভিন্ন সামরিক পণ্যও তারা নির্মাণ করে থাকে।

বিএই সিস্টেম-

৬. বিএই সিস্টেম
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানি বিএই সিস্টেম। এরোস্পেসের পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অস্ত্র উৎপাদক এই কোম্পানি। লন্ডনে অবস্থিত এই কোম্পানি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ হতে বিভিন্ন যুদ্ধ বিমান তৈরি করে এসেছে। বর্তমানে যুদ্ধবিমান ছাড়াও, যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, ট্যাংক, স্পেসক্রাফ্ট ও মিসাইল উৎপাদন করে তারা। এছাড়া নেক্সট জেনারেশন কপ্টার রাডার আর ভার্টিক্যাল টেক অফ এন্ড ল্যান্ডিং করার ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক বিমানও তৈরি করেছে তারা। ২৯.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের অধিকারী এই কোম্পানিতে নিযুক্ত রয়েছে প্রায় ৮৪ হাজার কর্মচারী।

জেনারেল ডায়নামিক কর্পোরেশন-

৭. জেনারেল ডায়নামিক কর্পোরেশন
এভিয়েশন ইন্ড্রাস্টির মধ্যে সবথেকে পুরাতন কোম্পানি জেনারেল ডায়নামিক কর্পোরেশন। প্রায় ১১৯ বছরের এই প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ ৩৫.০৪ বিলিয়ন ডলার। যার ৬০ ভাগ আয় হয় সামরিক খাত হতে। ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত এই কোম্পানি উড়োজাহাজ নির্মাণ ছাড়াও যুদ্ধযান, জাহাজ নির্মাণ, কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং অস্ত্র উৎপাদন করে। এছাড়া যুদ্ধবিমান, সামরিক ও বেসামরিক ট্রান্সপোর্ট বিমান, মিসাইল নির্মাণ তো আছেই। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই কোম্পানির তৈরি করা বিভিন্ন যুদ্ধ বিমানের কারনে তারা হয়ে ওঠে বিখ্যাত। জেনারেল ডায়নামিকের বিখ্যাত যুদ্ধবিমান ফ্যালকন এফ১৬ সারাবিশ্বের সবথেকে বেশি উৎপাদিত যুদ্ধবিমান। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে এই যুদ্ধবিমান।

এমব্রেয়ার –

৮. এমব্রেয়ার
ব্রাজিলিয়ান এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। যাত্রীবাহী ছোট আকৃতির বিমান ইএমবি১১০ থেকে বৃহদাকার ই১৯০ উড়োজাহাজ এই কোম্পানি উৎপাদন করে। এছাড়া প্রাইভেট জেট, মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট ছাড়াও নিজের দেশের মিলিটারি জেট ফাইটারেরও উৎপাদক এমব্রেয়ার। ব্রাজিলের সাও জোসে ডস কাম্পসে অবস্থিত এই কোম্পানির বর্তমান লোকবল প্রায় বিশ হাজার। আর সম্পদের পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার।

হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট –

৯. হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট
নিউজার্সিতে অবস্থিত এই কোম্পানি শত বছরের পুরনো। কর্মাশিয়াল বিমান, মিসাইল আর ডিফেন্সের বিভিন্ন সিকিউরিটি পণ্য উৎপাদন করলেও এই কোম্পানির মূলত এভিয়েশনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাতা। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য ছাড়াও বিমানের ইঞ্জিন, হুইল ও ব্রেকিং সিস্টেম, রাডার, এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি করে এই কোম্পানি। বর্তমানে এই কোম্পানির সম্পত্তির পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এখানে নিযুক্ত রয়েছে এক লাখ ত্রিশ হাজারের বেশি কর্মচারী।

Leave a Reply