আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যবর্তী সীমান্ত বরাবর ইগুয়াসু জলপ্রপাত

Share on Facebook

ইগুয়াসু জলপ্রপাত, যা ইগুয়াসু নদীকে তার উচ্চ ও নিম্ন বিভাগে ভাগ করেছে; এই ইগুয়াসু জলপ্রপাত আর্জেন্টিনা ও  ব্রাজিলের মধ্যবর্তী সীমান্ত বরাবর অবস্থান করে আছে। জলপ্রপাতের সংখ্যা ও উচ্চতা সারা বছর ধরে বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে বৃহত্তম জলপ্রপাত – ডেভিল’স থ্রোট – হল প্রায় ৮২ মিটার  উচ্চ। নদীর জলোচ্ছাসের অর্দ্ধেক “U” আকৃতির ডেভিল’স থ্রোট-এর মধ্যে গিয়ে পড়ে। এই ছোট জলপ্রপাতগুলির সংখ্যার পরিসীমা হল ১৫০ থেকে ৩০০, এটি নদীতে জলের স্তরের উপর নির্ভর করছে।

ইগুয়াসু হল দু’টি শব্দের সংমিশ্রণ “y” এবং “ûasú”, যার অর্থ হল যথাক্রমে “জল” এবং “বৃহৎ”। প্রায় ক্রান্তীয় অরণ্য দ্বারা বেষ্টিত, জলপ্রপাতটি একটি বিপরীত অক্ষর “J”-এর ন্যায় প্রদর্শিত হয়। জলপ্রপাতটি ব্রাজিলীয় দিকের চেয়ে, আর্জেন্টিনার দিকে অনেক বেশি প্রকটিত রয়েছে।

কোটি কোটি বছর আগে, একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যূৎপাতের ফলে ইগুয়াসু জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় কিংবদন্তীদের ধারণা অনুযায়ী, নাইপি নামক এক সুন্দরী মহিলা দেবতাদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করবেন বলে আশা করেছিলেন। এর পরিবর্তে, সে একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে তার প্রেমিক টারোবার সঙ্গে পালিয়ে যান। ক্রুদ্ধ ভগবান, পূজার বেদী ছেড়ে ওঠেন এবং প্রতিক্রিয়ায় নদীটিকে কেটে ফেলেন এবং জলপ্রপাতটির সৃষ্টি করেন, যাতে দুই প্রেমী তাদের সর্বনাশা নিয়তিতে পতিত হন।

১৫৪১ খ্রীষ্টাব্দে, প্রথম ইউরোপীয় এক স্প্যানিশ অনুসন্ধানকারী আলভার নূনেজ ক্যাবেজা ডি ভাসা এই জলপ্রপাতটিকে দেখেন। ১৮৯৭  খ্রীষ্টাব্দে একজন ব্রাজিলীয় সেনা আধিকারিক, ইগুয়াসু জলপ্রপাতে একটি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রবর্তন করেন। ১৯৩৪  সালে, আর্জেন্টিনায় ইগুয়াসু জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়। একইভাবে, ১৯৩৯  খ্রীষ্টাব্দে ব্রাজিলে ইগাকু জাতীয় উদ্যানের প্রতিস্থাপণ করা হয়। প্রাক্তনটি ১৯৮৪  সালে এক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হয়ে ওঠে। ব্রাজিলের ইগাকু জাতীয় উদ্যানটিও ১৯৮৭  সালে একই উপাধিতে ভূষিত হয়।আমেরিকার লেডি এলিয়ানোর রুশভেল্ট সর্বপ্রথম এই ইগুয়াসু জলপ্রপাতটি দেখেন এবং এটিকে “দরিদ্র নায়াগ্রা” হিসাবে বর্ণনা করেন।২০১১ সালের ১১ ই নভেম্বর, ইগুয়াসু জলপ্রপাতটি প্রকৃতির নতুন সপ্ত আশ্চর্যের মধ্যে এক অন্যতম হয়ে উঠেছিল।

ইগুয়াসু জলপ্রপাতের নিকটবর্তী কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে

ইগুয়াসু জাতীয় উদ্যান : সবচেয়ে এক অন্যতম চাক্ষুষ অত্যাশ্চর্য বন্যপ্রাণী গন্তব্যস্থল হিসাবে বিবেচিত, উদ্যানটি হল ২০০০-এরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও সেইসঙ্গে প্রাণীদেরও আবাসস্থল, যেমন হাওলার বাঁদর, জাগুয়ার (আমেরিকাদেশীয় ব্যাঘ্র বিশেষ), ওসেলোট (মধ্য আমেরিকার চিতাবাঘের মতো একজাতের বিড়াল) ইত্যাদি।

ম্যাকাও সাফারি : যে সমস্ত ব্যাক্তি উচ্চ তরঙ্গের মধ্যে রিভার র্যােফটিং করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত গন্তব্যস্থল।

সাও পাওলো : এটি ব্রাজিলের দীর্ঘতম শহর তার ঐতিহাসিক আকর্ষণ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কার্নিভ্যাল বা মেলা সমারোহ, তৎপর বাণিজ্যিক জেলা ও স্পন্দিত নৈশজীবনের জন্য সুপরিচিত।

ইগুয়াসু জলপ্রপাত ভ্রমণের সেরা সময়

ইগুয়াসু জলপ্রপাত, ডিসেম্বর থেকে মার্চ বর্ষার মরশুমে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। এই সময় আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্রও পেতে পারেন এবং নদীও এই সময় কখনও কখনও অধি-প্লাবিত হয়ে ভ্রমণপথে উপচে পড়ে এবং জলপ্রপাতগুলির পরিদর্শন করাও কঠিন হয়ে ওঠে।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এবং আবার জুন ও জুলাই-এর মধ্যবর্তী সময় হল চূড়ান্ত মরশুম। এই মাসগুলিতে জাতীয় উদ্যানগুলিও সবচেয়ে ব্যস্ত ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে আবহাওয়া মনোরম ও ভিড়ও কম থাকায় এই সময় পরিদর্শনে যাওয়াটাই শ্রেয়।

Leave a Reply