আট ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল

Share on Facebook

বাংলাদেশে কর্মরত চারটি
জিডিএস (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম)কোম্পানির বিরুদ্ধেই বিমানের বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে
নেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত। এই অর্থ হাতিয়ে নিতে সহযগিতা করেছে বিমান
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেরই
একটি সিন্ডিকেট। অ্যামাডিউস, অ্যাবাকাস, গ্যালিলিও ও সাবরি নামের এই চারটি জিডিএস কোম্পানির লুটপাটের সহযোগী
বিমানেরই তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক ট্রাভেল এজেন্ট।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
গঠিত তদন্ত কমিটি প্রমান পায় যে, ভ্রমণের
জন্য অপ্রয়োজনীয় টিকিট বুকিং দিয়ে তা বাতিলের মাধ্যমে বিমানের বিপুল পরিমানে আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছে বেশকিছু ট্রাভেল এজেন্সি। কমিটির
প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে আটটি ট্রাভেল কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা
হয়েছে।

এজেন্সিগুলো হলো চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল, দারুল ইমান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ট্রাভেল সেন্টার, সামস এয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর
লিমিটেড,
ঊর্মি ট্রাভেল এজেন্সি, মাদারল্যান্ড ট্যুরস অ্যান্ড
ট্রাভেলস ও বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট।

আদেশে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় টিকিট
বুকিং এবং তা বাতিলের মাধ্যমে বিমানের আর্থিক ক্ষতিসাধনের কারণে আটটি ট্রাভেল
এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট  জিডিএস কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের
লাভবান হওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয়ের আদেশে
বলা হয়, উল্লেখিত
ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে জুলাই ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ৫৯৮টি টিকিটের
জন্য বুকিং দেওয়া হয় এবং এ সময়ে ৪৯১টি টিকিট বাতিল করা হয়। এতে বিমানের আর্থিক
ক্ষতিসাধনের বিষয়টি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির
তদন্তে প্রমাণিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের বোর্ডসভায় বিষয়টি আলোচনা
শেষে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।

আদেশে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল
এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী এসব এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে
ইস্যু করা নিবন্ধন ও নিবন্ধন নবায়ন সনদ ফেরত দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায়
আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান
পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব
(পর্যটন ও পরিকল্পনা) আরিফুল হকের কাছে এর কারন জানতে চাওয়ায় তিনি
বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো বিমানের আর্থিক ক্ষতি করেছে।
তাই তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে অ্যাসোসিয়েশন
অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ সরকারের এই
পদক্ষেপকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি গতকাল সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘জিডিএসের কেউ
অপব্যবহার করে থাকলে এয়ারলাইনসের বিধি অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা যেত। এটি লঘু
পাপে গুরুদণ্ড হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, মন্ত্রণালয়ের এটি
বিবেচনা করা উচিত। কারণ সামান্য আর্থিক ক্ষতির কারণে এত বড় শাস্তিতে অনেক গ্রাহকের
ভোগান্তি হবে।’

আটাব সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা এজেন্সিগুলোর দূর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আগে জরিমানা করে এডিএম (এজেন্সি ডেবিট মেমো) রেইজ করা যেত। তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যেত। তা না করে সরাসরি লাইসেন্স বাতিল কাম্য নয়। এখন সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো আপিল করবে এবং তারা লাইসেন্স ফিরে পাবে বলে আশা করি।’

তদন্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে টিকিট বুকিং বাতিলের জন্য চারটি জিডিএস কোম্পানিকে ৯৩ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হলেও বেশির ভাগ বুকিংই ছিল ভুয়া। উক্ত সময়ে পাঁচটি দেশের ২২ জন এজেন্ট ৮০ শতাংশ বুকিং করেছে এবং সাতটি দেশের ৩১ জন এজেন্ট ৭৫ শতাংশ বুকিং করা টিকিট বাতিল করেছে।’

Leave a Reply