অস্ট্রেলিয়ার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা

Share on Facebook

অস্ট্রেলিয়া  একটি দ্বীপ-মহাদেশ। এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।অস্ট্রেলিয়া ৬টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে – কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, নিউ সাউথ ওয়েল্স, তাসমানিয়া, ভিক্টোরিয়া, ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও রয়েছে দুইটি টেরিটরি – অস্ট্রেলীয় রাজধানী টেরিটরি এবং উত্তর টেরিটরি। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে – ম্যানলি বীচ,  রিচমন্ড ,ব্লু মাউন্টেন,মেরিম্বুলা,ক্যানবেরা,নিউ কাস্তেল , টরোঙ্গা চিড়িয়াখানা  ,বণ্ডাইবীচ  ইত্যাদি।

ম্যানলি বীচ- সিডনি শহরে থেকে পাবলিক ফেরি কোরে ম্যানলি বীচে যাওয়া যায়, ফেরিতে এই সমুদ্রযাত্রাটা পর্যটকেরা খুবই উপভোগ করে। ম্যানলি বীচে কিছু স্যুভেনিরের দোকান ও খাবারের দোকান আছে। পর্যটকেরা সাধারণত সকালবেলা ফেরিতে  চড়ে , ম্যানলি বীচে পৌঁছে  সেখানকার  জায়গাগুলো ঘুরে দেখেন। যারা সার্ফিং করতে ভালোবাসেন তারা সমুদ্রের জলে নেমে পড়েন, অনেকে কিছুটা সময় বীচে কাটান।

 

রিচমন্ড – রিচমন্ড শহর থেকে ব্লু মাউন্টেন  দেখা যায়।  সকালে  অথবা  সন্ধ্যাই  হাঁটার   জন্য প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা আর ৫০০ মিটার চওড়া ‘ফ্রেন্ডশিপ’ পার্ক। সাইক্লিং এর জন্য দুই মিটার বাধানো রাস্তা ,হাটার জন্য এক মিটার চওড়া বাধানো রাস্তা পাশাপাশি করা আছে। এখানে সাইক্লিং করাটা খুবই জনপ্রিয়। পার্কের মধ্যে ১০ টা জিম ইন্সট্রুমেন্ট , বড় বড় অস্ট্রেলিয়ান বীচ, কাররি, নানা জাতের ইউক্যালিপটাস, পাইন, সাদা ও লাল রঙের বটল ব্রাশ আরও নানান রকমের গাছ আছে।এছাড়া রিচমন্ড ষ্টেশনের সামনেই বিরাট রিচমন্ড পার্কও আছে।

ব্লু মাউন্টেন – সিডনি থেকে ব্লু মাউন্টেন এর দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার, সিডনির অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই ব্লু মাউন্টেন , ৯৬ কিলোমিটার  লম্বা আর প্রায় ১১,৪০০  স্কয়ার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিতি , এটি  ২০০০ সালে ইউনেস্কো  দ্বারা  ঘোষিত। অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সেখানে রয়েছে বিরল জাতের উঁচু উঁচু গাছ, কাটুমবা জলপ্রপাত, সবুজে ঘেরা বিশাল নীলাভ পাহাড়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরব। এখানে নানান জাতের গাছ  রয়েছে  ইউক্যালিপটাস গাছ,  ব্লু গাম গাছ,  অ্যাস  ও  ফার্ন গাছ। এইসব গাছ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়, যেমন- ইউক্যালিপটাস  দিয়ে তেল তৈরি হয়, পাতা হারবাল চায়ে ব্যবহার হয় আর এই গাছের ফুল থেকে মধু হয় তবে তার গন্ধটা খুবই তীব্র। এছাড়া ব্লু মাউনটেনের জঙ্গলের  এই অ্যাস গাছ থেকে খুব সহজেই বুশ ফায়ারের সম্ভাবনা থাকে। রোদবৃষ্টি, ঝড়, বরফের দাপট আর প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্লু মাউনটেন পাহাড়ের কিছুটা অংশ এমনভাবে রূপান্তরিত হয়েছে, দেখলে মনে হবে যেন তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকেদের দেওয়া নামে এরা Three Sisters বলে  বিখ্যাত।  এই  দর্শনীয় স্থানটি  পর্যটকদের কাছে  বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।

 

মেরিম্বুলা – মেরিম্বুলা শহর পর্যটকদের কাছে আরেক আকর্ষণীয় স্থান। মেরিম্বুলা নামে একটা বড় লেকও আছে, তারই পাশে গড়ে উঠেছে মেরিম্বুলা শহর। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অ্যাবরিজিনিদের কথায় মেরিম্বুলা মানে ‘দুটো লেক’। মেরিম্বুলা আরও দুটি কারণে বিখ্যাত, এক এখানকার রক অয়েসটার খুবই উপাদেয় খাদ্য আর দুই জুনমাসের লং উইক এন্ডে জাজ ফেস্টিভ্যাল। এছাড়া লেকে মাছ ধরা, তিমিমাছ দেখা, উইন্ড সারফিং তো আছেই। মেরিম্বুলায়  লেকের কাছেই অনেক হোটেল পাওয়া যায় থাকার জন্য।

 

ক্যানবেরা – মেরিম্বুলা থেকে ক্যানবেরা দূরত্ব ২৪০কিলোমিটার। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা,  এখানে অস্ট্রেলিয়ান ওয়ার মেমোরিয়াল এক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যার উদ্বোধন হয়েছিলো ১৯৪১ সালে। এটি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় মিলিটারি সংগ্রহশালা আর পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ওয়ার মেমোরিয়াল রোজ সকাল দশটায় খোলে আর পাঁচটায় বন্ধ হয়, এখানে যে সমস্ত মূল্যবান জিনিষ সংগ্রহ কোরে রাখা আছে সেগুলো পর্যটকদের মুঘধ করে।   ক্যানবেরায় পার্লামেন্ট হাউসটি অন্যতম এই বাড়িটার ছাদ থেকে ক্যানবেরা শহরটার প্রায় সবটাই দেখা যায় আর পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম স্টেইনলেস স্টিল স্ট্রাকচার এর উপর ৮১ মিটার  উঁচু ফ্ল্যাগমাস্টটি খুব কাছ থেকে দেখা যায়। পর্যটকেরা ট্যুর গাইড অথবা নিজেরাও পুরো হাউসটি ঘুরে দেখতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় খোলে আর ৫ টায় বন্ধ হয়, খ্রিস্টমাস ডে ব্যতীত ।

 

নিউক্যাসেল – নিউক্যাসেল শহরটা ঘুরে দেখার মত, কারন এই শহর কয়লাখনি,বীচ,আঙ্গুরের ক্ষেত আর ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত, এখানে  হোয়াইট আর  রেড  দুরকমের ওয়াইনই তৈরি হয়। নিউক্যাসেল এর বীচে এলে বড় বড় জাহাজ দেখা যায়, কারণ ১৭৯৭ সালে এখানে কয়লাখনি আবিষ্কার হওয়ার পরথেকেই নিউক্যাসেল থেকে কয়লা ভর্তি জাহাজ চলাচল শুরু হয় আর নিউক্যাসেল এখন পৃথিবীর বৃহত্তম কয়লা রপ্তানির বন্দর। নিউক্যাসেলে  রয়েছে , বিশাল জায়গা নিয়ে আঙ্গুরের ক্ষেত তার সঙ্গে  নানারকম ওয়াইন  বিক্রির দোকান। পর্যটকরা এলে তাঁদের বিনামূল্যে ওয়াইন   চেখে দেখতে দেওয়া হয় ।  অনেক বিদেশী পর্যটক প্রতি বছর   নিউক্যাসেলে  বেড়াতে  আসে এইসব সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

 

বণ্ডাইবীচ – বণ্ডাইবীচ পর্যটকদের জন্য সবথেকে আকর্ষণীয় স্থান। বণ্ডাইবীচ সিডনি থেকে মাত্র ৮  কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত সিডনি থেকে ট্রেন অথবা  বাসে  করেও যাওয়া যায়। অ্যাবরিজিনিদের কাছে বণ্ডাই কথার মানে পাথরের উপর জল আছড়ে পরার শব্দ। অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় রাগবি খেলা এখানেই হয়।  অনেক আইরিশ আর ব্রিটিশ পর্যটকরা ক্রিস্টমাস দিবস বণ্ডাইবীচে এসে পালন করেন। প্রতি বৎসর জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতমশর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ‘ফ্লিকেরফেস্ট’ বণ্ডাইবীচে অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সমুদ্রতটে প্রচুর লোকজন জলে নামেন  সাঁতার কাটার জন্য। অসতর্কতার কারনে  অনেক সময় কিছু মানুষ ডুবে যায়, অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে আবার সমুদ্রের হাঙ্গরের শিকার হন যেকোনো বিপদের সময়ে লাইফ সেভিং ক্লাবের সভ্যরা তাঁদের উদ্ধার ও নানা ভাবে সাহায্য করেন। অস্ট্রেলিয়ায় সার্ফিং খুব জনপ্রিয় জলক্রীড়া তাই প্রায় সব বীচেই লাইফ সেভিং ক্লাবের ভলেনটিয়াররা সমুদ্রে যেখানে বেশী জল বা বিপদগ্রস্ত এলাকাতে লাল ফ্ল্যাগ লাগিয়ে পর্যটকদের সতর্ক কোরে দেন আর কেউ বিপদে পড়লে তাঁদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

Leave a Reply