অপরিকল্পিত পর্যটনের কারনে দূষিত হচ্ছে সেন্টমার্টিন

Share on Facebook

প্রতি বছরের আগস্টে
পর্যটন মৌসুম শুরু হয় বাংলাদেশে। চলে এপ্রিল পর্যন্ত। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে
মার্চে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম চোখে পড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। গড়ে প্রতিদিন
প্রায় ৩৫০০ পর্যটক যায় সেন্টমার্টিনে। ভ্রমণপ্রেমীর সংখ্যা এই দ্বীপের ধারণক্ষমতার
চেয়ে বেশি।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের মাধ্যম জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। কিন্তু জাহাজ ও ট্রলারগুলো তেল ও বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে ফেলছে যা কাজ করে সামুদ্রিক বাস্তুবিদ্যার দূষণে চলক হিসেবে। একইভাবে পর্যটক ও স্থানীয়রা ব্যবহৃত পণ্যের উচ্ছিষ্ট অংশ তথা অপচনশীল দ্রব্য (প্লাস্টিকের উপকরণ, অ্যালুমিনিয়াম ক্যান ইত্যাদি) ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রের পানিতে ফেলে পরিবেশকে দূষিত করছেন আরও। দ্বীপপুঞ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রবালের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে প্লাস্টিক ও তেল দূষণের কারণে।

পর্যটনের তিন ধরনের
প্রভাব (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত) বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন। অগোছালো পর্যটনের
প্রভাবগুলো একইসঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক হতে পারে।

পর্যটকদের প্রবাল ও
শেল সংগ্রহের কারণে দূষিত হচ্ছে সৈকতের পরিবেশ। পাথরের ওপর ঘোরাঘুরি ও গোসলের
কারণে প্রবালের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়। উপড়ে ফেলা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো
সামুদ্রিক শৈবাল। ডিম পাড়ার জন্য কচ্ছপ আসছেনা সৈকতে। বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের
হোটেলগুলোর আলোকসজ্জা কচ্ছপের ডিম পাড়ার অন্তরায়। এছাড়াও নিয়মিত বিরতিতে কচ্ছপকে
মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে কচ্ছপগুলো।

সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সমস্যাটি হলো দ্বীপে পাওয়া মাছগুলো এখন ক্ষতিকর ভারী ধাতব পদার্থের কারণে দূষিত হচ্ছে। আর কোরাল ব্লিচিং এখন দ্বীপের সাধারণ ঘটনা। সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ টেকসই পর্যটন। ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিল পর্যটন শিল্প। এখন এই খাত থেকে প্রায় একহাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষের। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পর্যটন থেকে ২০১৮ সালে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করে যেখানে বাংলাদেশ ২০১৭ সালে আয় করে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশের দুটি
সমুদ্র সৈকত (এর মধ্যে একটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত) থাকা সত্ত্বেও পর্যটন শিল্প
থেকে আমাদের আয় খুবই অল্প। যদিও স্থানীয়দের কাছে পর্যটনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি
পাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের
অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থার ওপর দেশীয় পর্যটনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, প্রচারণা ও অব্যস্থাপনার
কারণে বিদেশি পর্যটকদের কাছে দ্বীপটিকে আকর্ষণীয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে পর্যটন
কর্তৃপক্ষ। পর্যটন সুবিধা ও দ্বীপের পরিবেশ উন্নত করতে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতকে অনুসরণের পরামর্শ
দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একটি প্রবন্ধে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেরিন সায়েন্সেসের মো. শিমুল ভূঁইয়া ও মো. শফিকুল ইসলাম এবং ফিশারিজ ও কক্সবাজারের বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ।

প্রাবন্ধিকদের মন্তব্য, ‘পর্যটন পরিবেশের
ক্ষতি করবে না তেমন টেকসই পর্যটনকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে
হবে প্রথমে। অন্যথায় কালের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এর সুষ্ঠু ও
অর্থবহ ব্যবস্থাপনার জন্য এখনই দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কার্যকর
ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বোপরি দেশের সাধারণ নাগরিককে পর্যটনের ব্যাপারে আরও
সচেতন হতে হবে। দ্বীপের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আশেপাশের
মানুষকে সচেতন করতে হবে।’

Leave a Reply